হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য ৪৪ বছর ধরে বারো মাস রোজা রাখছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বিধবা ভেজিরন নেছা।
১৯৭৫ সালে তার বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম ১১ বছর বয়সে হারিয়ে যান। বিভিন্ন যায়গায় সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যান এই মা। পরে সন্তানকে ফিরে পেতে আরজি করেন মহান আল্লাহর দরবারে।
মসজিদ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, সন্তান ফিরে এলে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য রোজা পালন করবেন সারাবছর। হারিয়ে যাবার দেড়মাস পর সন্তান
বাড়িতে ফিরে এসে ‘মা’ বলে ডাক দেন। শান্তির পরশ পান ভেজিরন নেছা। এরপর থেকেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে, বারোমাস রোজা পালন করছেন এই মমতাময়ী মা।
এলাকাবাসী জানান, অভাব অনটনের পাশাপাশি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন ভেজিরন নেছা। তারপরেও সন্তানের কল্যাণে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেননি তিনি।
বৃদ্ধা এই মা’কে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া হয়েছে জানিয়ে, তাকে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ঝিনাইদহ মধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমেদ।
৭৫ বছর বয়সী ভেজিরন নেছার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। এদের মধ্যে এক মেয়ে মারা গেছেন।
কুরআনের ভুল ধরতে গিয়ে সূরা ইখলাস পড়েই মুসলিম
ইরিনা হানদোনো ইন্দোনেশিয়ার সুপরিচিত নও-মুসলিম। ১৯৮৩ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। বর্তমানে একজন দা‘ঈ বা ইসলাম প্রচারক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। নও-মুসলিমদের জন্য ইরিনা সেন্টার নামে একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন এই নারী। ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে ইউটিউবে প্রচারিত তাঁর একটি আত্মকথার কিছু নির্বাচিত অংশ দেয়া হলো—
আমি ইন্দোনেশিয়ার একটি ধার্মিক খ্রিস্টান পরিবারে বেড়ে উঠি। আমি প্রাচুর্যের ভেতরই বড় হয়েছি। আমার পরিবার ছিল ধনী। তারা আমার শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে সব করেছে। তখন সমাজের প্রচলিত ধারণা ছিল, খ্রিস্টানরা দেশের বেশির ভাগ মানুষ থেকে ভিন্ন।
তারা ধনী, শিক্ষিত। সুন্দর সুন্দর জুতা পরে। আর মুসলিম হওয়ার অর্থ— তারা দরিদ্র, অশিক্ষিত এবং মসজিদের সামনে থেকে তাদের কম দামি স্যান্ডেলও চুরি হয়ে যায়।
খুব ছোট থেকে আমি ধর্মীয় অনুপ্রেরণা লাভ করি। আমি স্রষ্টার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ইচ্ছা পোষণ করতাম। কিশোর বয়সে স্থানীয় চার্চের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতাম।
একজন নান হওয়ার প্রবল স্বপ্ন ছিল আমার। একজন ক্যাথলিক হিসেবে জাগতিক জীবন চার্চে কাটাতে চাইতাম, যেখানে সবাই ভালো কাজ করে। হাইস্কুল স্তর শেষ করার পর দীক্ষা নিতে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই।
অবশ্য আমার সিদ্ধান্তে আমার পরিবার বিস্মিত হয়। কারণ পাঁচ ভাই-বোনের ভেতর আমি ছিলাম একমাত্র মেয়ে। তাঁরা আমাকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিতেন না। তবে আমার দৃঢ়তা দেখে তাঁরা নমনীয় হন এবং আমার ইচ্ছা পূরণে সম্মতি দেন।
একজন শিক্ষানবিশ নান হিসেবে আমি কাজ শুরু করি। এজন্য আমাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। তবে চার্চের বাইরে বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়েছিল। সেখানে ধর্ম-দর্শন বোঝার জন্য তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হয়। আমি এ সময় ইসলাম ধর্মের তাত্ত্বিক আলোচনায় মনোযোগী হলাম। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশে জন্মালেও এটিই ছিল ইসলাম সম্পর্কে আমার প্রথম জ্ঞানার্জন।
চার্চের সেই প্রশিক্ষণে আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু কুসংস্কারের চর্চা দেখতে পাই, যা আমি খ্রিস্টসমাজে আগেও দেখেছিলাম। মুসলিমরা দরিদ্র, অশিক্ষিত, অসভ্য ইত্যাদি। অবশ্য আমার ২০ বছর বয়সে আমি এসব কুসংস্কার কখনো গ্রহণ করিনি, বরং নিজে বিচার-বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি।
আমি অন্যান্য দেশ সম্পর্কে অধ্যয়ন শুরু করলাম। বিশেষত অমুসলিম দেশ সম্পর্কে। আমি দেখলাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দারিদ্র্যের শিকার আরো অনেক দেশ আছে। যেমন— ভারত, চীন, ফিলিপাইন, ইতালি (তখন) এবং দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ।
আমি আমার শিক্ষকের কাছে ইসলাম সম্পর্কে পড়ার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমার অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের ত্রুটিবিচ্যুতি ও দুর্বলতা খুঁজে বের করা। আমার মিশন শুরু হলো।
আমি কুরআন নিয়ে বসলাম এবং এমনসব বিষয় অনুসন্ধান শুরু করলাম, যা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারব। আমি তখনো জানি না, কোরআন ডান দিক থেকে পড়তে হয়। অন্যান্য বইয়ের মতো বাঁ দিক থেকে পড়তে লাগলাম।
প্রথমেই আমার চোখে পড়ল— ‘বলুন! তিনি আল্লাহ। তিনি এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। এবং কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়।’ (সূরা ইখলাস)
কুরআনের এই সূরা পড়ে মুগ্ধ হলাম। আমার অন্তর সাক্ষ্য দিল আল্লাহ এক। স্রষ্টার কোনো সন্তান নেই। তিনি কারো সৃষ্টি নন। কোনো কিছুই তাঁর সমকক্ষ নয়। সূরা ইখলাস পাঠ করার পর একজন যাজকের কাছে স্রষ্টায় বিশ্বাসের মূলকথা কী জানতে চাইলাম।
তাঁকে বললাম, আমি বুঝছি না একজন ঈশ্বর একই সময়ে একজন ও তিনজন কিভাবে হয়? তিনি বললেন, স্রষ্টা মূলত একজন। তবে তাঁর তিনটি প্রকাশ বা ব্যক্তিত্ব রয়েছে। ঈশ্বর যিনি পিতা, ঈশ্বর যিনি পুত্র, ঈশ্বর যিনি পবিত্র আত্মা। এটিকেই ত্রিত্ববাদ বলা হয়। তাঁর ব্যাখ্যা আমি গ্রহণ করলাম। কিন্তু রাতে সূরা ইখলাসের বক্তব্যগুলো আমার চিন্তায় উঁকি দিতে থাকে— স্রষ্টা একজন। তিনি কারো জাতক নন। কেউ তাঁর সন্তান নয়।
পরদিন সকালে আমি আবারও আমার শিক্ষকের কাছে গেলাম। তাঁকে বললাম, ত্রিত্ববাদের ধারণাটি আমার বুঝে আসছে না। তিনি আমাকে একটি বোর্ডের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি ত্রিভুজ এঁকে বললেন, এখানে ত্রিভুজ একটি। কিন্তু তার দিক বা বাহু তিনটি। ত্রিত্ববাদের ধারণাটিও ঠিক তেমন।
তাঁর বক্তব্যের পর আমি বললাম, তাহলে তো এটিও সম্ভব আমাদের প্রভুর চারটি দিক বা বাহু থাকবে। তিনি বললেন, তা সম্ভব নয়। আমি জানতে চাইলাম কেন? তিনি অধৈর্য হলেন। বারবার বলতে লাগলেন, সেটি সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমি প্রশ্ন করেই গেলাম।
এক পর্যায়ে তিনি বললেন, ত্রিত্ববাদের এই ধারণা আমি গ্রহণ করেছি। তবে তা আমার বুঝে আসে না। তুমিও এটি মেনে নাও, হজম করো। বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা পাপ। কিন্তু আমি হজম করতে পারলাম না।
রাতে আবারও কোরআনের কাছে ফিরে এলাম। সুরা ইখলাস পাঠ করলাম, যেন কিছু আমার অন্তরে প্রবেশ করল। আমার কোনো সংশয় রইল না আল্লাহ এক।
আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ও গবেষণা থেকে বুঝতে পারলাম ত্রিত্ববাদের ধারণা মানুষের তৈরি, যার উদ্ভব হয়েছে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দের পর। আগে তা ছিল না। বিষয়টি আমার ক্যাথলিক পরিচয়কেই বোঝা করে তুলল।
এরপর মুসলিম হতে এবং নতুন ধর্মবিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে আমার ছয় বছর লেগেছিল। যখন আমি ইসলাম গ্রহণের আবেদন করলাম, ধর্মীয় পণ্ডিত জানতে চাইলেন, আমি কি পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত? তিনি বললেন, ইসলাম গ্রহণ করা সহজ। কিন্তু পরবর্তী জীবনে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।
আমি প্রস্তুত ছিলাম। নিজেকে রক্ষা করার, নিজের আত্মাকে রক্ষা করার অধিকার আমার ছিল। অমূলক কোনো মতবাদ নিয়ে পড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ইসলাম গ্রহণের পর আমি আমার পরিবার ও সম্পদ হারাই। আমি একা হয়ে যাই। পরিস্থিতি খুব ভালো ছিল না। তবে আল্লাহ আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার আশ্রয়
একজন নতুন মুসলিম হিসেবে আমি আমার করণীয় সম্পর্কে সচেতন ছিলাম। আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতাম, রমযানে রোযা রাখতাম এবং হিজাব পরতাম।
আগেও আমার জীবন ছিল স্রষ্টার জন্য উৎসর্গিত। এখনো আমার জীবন আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আলহামদুলিল্লাহ! আমার জীবন শুধু আল্লাহর জন্য।
বাসা ভাড়া দিতে না পারায় ঘরের চাউল নিয়ে গেলেন বাড়ির মালিক
এক মাসের বাসা ভাড়া দিতে না পারায় বরগুনায় এক বাড়িওয়ালার বি’রুদ্ধে ভাড়াটিয়ার ঘরের চাল নিয়ে যাওয়ার অ’ভিযোগ উঠেছে। যদিও ঘর মালিকের দাবি, ঘর ভাড়ার ১৫ শ টাকা দিতে না পারায় ভাড়াটিয়া নিজেই স্বেচ্ছায় ভাড়ার বিনিময়ে চাল দিয়েছেন। তবে ভাড়াটিয়ার অ’ভিযোগ, লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় চা’প প্রয়োগ করে ঘর থেকে চাল নিয়ে গেছেন ঘর মালিক।
মঙ্গলবার দুপুরের বরগুনার স’দর উপজে’লার গৌরিচন্না ইউনিয়নের মহাসড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভাড়াটিয়ার চাল নেওয়ার ঘটনায় অ’ভিযু’ক্ত ঘর মালিকের নাম সরোয়ার মোল্লা। তিনি গৌরিচন্না ই’উনিয়নের বাসিন্দা। আর এ ঘটনায় ভু’ক্তভোগী ভাড়াটিয়ার নাম মো. ফারুক। তিনি বরগুনা বাসমালিক সমিতির একজন বাসচালক।
বাসচালক মো. ফারুক জানান, চলমান লকডাউনে বাস চলাচল ব’ন্ধ থাকায় তিনি ক’র্মহীন হয়ে পড়েন। এ জন্য ১৫ শ টাকা করে মা’র্চ ও এপ্রিল মাসের মোট তিন হাজার টাকা ভাড়া বাকি পড়ে। যদিও বাড়িওয়ালার কাছে তার অগ্রিম বাবদ একমাসের ১৫ শ টাকা দেওয়া আছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বাকি এক মাসের টাকার জন্য বাড়িওয়ালা তার বাসায় গেলে তিনি তার অ’সয়াত্বের কথা বাড়িওয়ালাকে জানান। এ সময় তিনি বাড়িওয়ালাকে জানান, তার ঘরে শুধু এক মণ চাল ছাড়া আর কিছুই নেই। এ সময় বাড়িওয়ালা সরোয়ার মোল্লা সেই একমণ চালই দেওয়ার কথা বলেন তাকে। একপর্যায়ে তিনি তার ঘর থেকে ওই একমন চাল নিয়ে যান।
বাড়িওয়ালা সরোয়ার মোল্লা বলেন, ভাড়াটিয়া ফারুক স্বেচ্ছায় ঘরভাড়ার পরিবর্তে আমাকে চাল দিয়েছে। তাই আমি চাল নিয়েছি। ঘর ভাড়া কিংবা ভাড়ার পরিবর্তে চাল নেওয়ার জন্য আমি তাকে কোনোপ্রকার চা’প প্রয়োগ করিনি।
বরগুনার সড়ক পরিবহণ শ্র’মিক ই’উনিয়নের সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ক’রোনার এই দুঃ’সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া বাসচালক ফারুকের সাথে যা ঘটেছে, এর থেকে নি’র্মম আর কিছু হতে পারে না। আম’রা এ ঘটনায় অ’ভিযু’ক্ত বাড়িওয়ালার দৃ’ষ্টান্তমূলক শা’স্তি চাই।
বরগুনা জে’লা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বাসাভাড়ার পরিবর্তে বাসচালক ভাড়াটিয়ার ঘরের চাল নিয়ে যাওয়ার বি’ষয়টি আম’রা শুনেছি। তাই এ ঘটনার ত’দন্ত শুরু করেছি আম’রা। ঘটনার সত্যতা পেলে এই ন্যা’ক্কারজনক ঘটনার জন্য ঘর মালিকের বি’রুদ্ধে আ’ইনানুগ ব্য’বস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, জে’লাজুড়ে আমাদের খাদ্যসহায়তা কার্যক্রমসহ নগদ অর্থসহায়তা প্রদান চলমান রয়েছে। বাসচালক ভাড়াটিয়া ফারুকসহ অন্য চালকদের সহায়তায় বরগুনা জে’লা প্রশাসন শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।